ডিজিটাল সেলফ ইমেজ এবং ব্যক্তি পরিচয়

ডিজিটাল সেলফ ইমেজ এবং ব্যক্তি পরিচয়

সামি ইন্টারনেটে কিছু পোস্ট করতে, শেয়ার করতে বা লাইক দিতে  অনেক চিন্তা করে। এতে করে কি ইন্টারনেটের আসল মজাটাই নষ্ট হয়ে যায়?                                                                       


কোচিং শেষ করে মাইশা, সামি, সায়মা এসেছে ক্যাফে ইলেভেনে আড্ডা দিতে।


সামি: আজ ইন্টারনেটে একটা মজার বিষয় পড়লাম, এটা হলো ডিজিটাল সেলফ ইমেজ।

নিশি: ডিজিটাল সেলফ ইমেজ? এটা আবার কী?

মাইশা: বিস্তারিত বল তো বিষয়টা কী?

সামি: নিজের সম্পর্কে আমরা যা কিছু ভাবি বা কল্পনা করি অনলাইনে তারই প্রকাশ ঘটে এবং তার মাধ্যমে অন্যদের কাছে নিজের একটা পরিচয় গড়ে ওঠে, এটাই ডিজিটাল সেলফ ইমেজ ও ব্যক্তি পরিচয়।

নিশি: কিন্তু এখানে তুই মজার কী দেখলি? বিস্তারিত খুলে বল।

মাইশা: এটা ভালো, না খারাপ?

সামি: কেউ যদি নিজেকে খুব জ্ঞানী, সুন্দরী বা নিজেকে যেমন মনে করে তার প্রকাশ ঘটে সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টের মাধ্যমে। একইভাবে কেউ যদি হতাশা বা মনোকষ্টে ভোগে, কেউ যদি হীনমন্যতায় ভোগে তারও প্রকাশ ঘটতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ার তৈরি চরিত্রে। এভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার ভার্চুয়াল চরিত্রে সচেতনভাবে বা অবচেতনভাবে ব্যক্তি তার নিজের সেলফ ইমেজ গড়ে তুলতে পারে। এই সেলফ ইমেজ দিয়ে অন্যরা সেই ব্যক্তিকে বিচার করে। কারো সেলফ ইমেজ ভুয়া হলে ব্যক্তির মূল্যায়নও ভুল হতে পারে।  

মাইশা: এবার বুঝেছি। আমার আন্টি খুব সুন্দরী। কিন্তু তিনি নিজেকে সুন্দরী মনে করেন না। একারণে তিনি হীনমন্যতায় ভুগতে পারেন। এসবের প্রকাশ ঘটে তার প্রতিটি পোস্টে।

নিশি: কিন্তু সেলফ ইমেজ নেতিবাচক বা ভুল হবে কেমন করে? যে যা করে সেটার মাধ্যমেই তার পরিচয় গড়ে ওঠা উচিত।

সামি: কেউ যদি নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়া ইমেজ গড়ে তোলে তাহলে অন্যদের কাছে তার ভুল পরিচয় গড়ে উঠবে।

মাইশা: কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য কেন দেবে?

সামি: অনেকেই ফেক আইডি তৈরি, ছদ্মনাম ব্যবহার, বিভ্রান্তিপূর্ন, বিতর্কিত বা কুরুচিপূর্ণ বিষয়ে লেখে, শেয়ার করে অনেকেই আবার বাস্তব জীবনে যেমন নয় সেভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করে, এতে অন্যের কাছে তার ভুল পরিচয় গড়ে ওঠে। কেউ নিয়মিত রাজনৈতিক পোস্ট দিলে বোঝা যায় যে, তিনি রাজনীতি পছন্দ করেন। তবে অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়া সেলফ ইমেজের মাধ্যমে ভুয়া পরিচয় গড়ে তোলে তারপর ফাঁদে ফেলে বা ব্ল্যাকমেইল করে। যেমন প্রতারকেরা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে চাকুরী দেয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয়।

নিশি: কিন্তু সঠিক সেলফ ইমেজের কারণে কী বিপদে পড়ার কোনো সম্ভাবনা আছে?

সামি: অবশ্যই আছে। নিজের হীনমন্যতা, আত্মবিশ্বাসহীনতা বা কোনো দুর্বলতা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত প্রকাশ পেলে সুযোগসন্ধানী প্রতারকেরা তাকে ফাঁদে ফেলতে পারে। আবার কেউ যদি নিজেকে বিজ্ঞানমনস্ক প্রমাণের জন্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে পোস্ট দেয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেফতার করতে পারে। কারণ এটা বেআইনী কাজ।  

মাইশা: এমন কোনো পোষ্ট দেয়া উচিত নয় যাতে কেউ আঘাত পায়। এতে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে।

সামি: অনেক সহিংস উগ্রবাদী দলের সদস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভালো ভালো ধর্মীয় পোস্ট দেয়। এতে তাদের প্রতারণামূলক ধর্মভীরু সেলফ ইমেজ তৈরি হয়। তারা এটা করে দুর্বল মনের ও নেতিবাচক চরিত্রের তরুণদের খুঁজে বের করতে। এই ধরনের পোস্টে দুর্বল মনের তরুণেরা সাড়া দেয়। তারা এই ধরনের পোস্টে লাইক-শেয়ার-কমেন্ট করে। এর ফলে উগ্রবাদীদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং তাদের ফাঁদে পড়ে। এরপর সেই উগ্রবাদী ব্যক্তি তরুণদের সাথে গোপনে যোগাযোগ করে। ধর্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা বা সমাজে ধর্মীয় নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কথা বলে সন্ত্রাসী কাজে যুক্ত করতে পারে। এভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় কারো বা নিজের সেলফ ইমেজ অনেকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

নিশি: বুঝতে পেরেছি সেলফ ইমেজের মাধ্যমেই অনলাইনে একজনের পরিচয় গড়ে ওঠে। কাজেই অনলাইনে কোনো কাজ করার আগে আমাদের ভাবতে হবে।

সামি: সব সময় মনে রাখবি অনলাইনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা যা কিছু করি তার মাধ্যমে নিজেদের সেলফ ইমেজ গড়ে ওঠে। ডিজিটাল জগতে অন্যের কাছে এটাই আমাদের পরিচয়। অনলাইনে নিজের ভালো সেলফ ইমেজ বা পরিচয় গড়ে তুলতে হলে ভালো ডিজিটাল নাগরিক হতে হবে।

নিশি: ভালো ডিজিটাল নাগরিক হতে আর কী করা যেতে পারে? 

সামি: ভালো ডিজিটাল নাগরিক হতে হলে সচেতনভাবে নিজের ইতিবাচক সেলফ ইমেজ ও পরিচয় তুলে ধরতে হবে। এটা তাকে ভালো পরিবেশ ও অনলাইন কমিউনিটির সাথে যুক্ত করে মানসিক উন্নতির পথে নিয়ে যেতে পারে। সব সময় নিজের এবং অন্যের ব্যক্তি পরিচয়কে সম্মান করতে হবে, অন্যের ক্ষতি হয় বা অন্যরা আঘাত পায় এমন কোনো আচরণ করা উচিত হবে না। যাচাই না করে অপরিচিত কারো সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত নয়। বিপদজনক, বিতর্কিত, ক্ষতিকর পেইজ, গ্রুপ ও সাইট এড়িয়ে চলা উচিত। সামাজিক এবং নাগরিক মূল্যবোধ এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনলাইনের ক্ষেত্রেও মেনে চলতে হবে। 

নিশি: ছোট্ট একটা কথা মনে রাখতে হবে, নিজের সেলফ ইমেজ ও ব্যক্তি পরিচয় নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়। 

মাইশা: তোর কাছে আজ অনেক কিছু জানতে পারলাম সামি, তোকে অনেক ধন্যবাদ।

রাউন্ড ০৪ ডিজিটাল সেলফ ইমেজ এবং ব্যক্তি পরিচয়

অনলাইনে আমরা যা কিছু করি সেটা দিয়ে অন্যদের কাছে আমাদের একটা পরিচয় তৈরি হয়, এটাই ডিজিটাল সেলফ ইমেজ এবং এর দ্বারাই গড়ে ওঠে আমাদের অনলাইন ...

জানার আছে অনেক কিছু

সাইবার বুলিং
সাইবার বুলিং

নিশিকে উত্ত্যক্ত করছে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অর্ক। এখন কী করবে সে? ...

আরও পড়ো
ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট ও ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি
ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট ও ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি

নিশি আর এখন যেখানে সেখানে লাইক দেয় না, যার তার পোস্ট শেয়ার করে না। তার এই ...

আরও পড়ো
ডিজিটাল সেলফ ইমেজ এবং ব্যক্তি